ঈদগাঁও প্রতিনিধি;
জুলাই অভ্যুত্থানের আট মাস পেরিয়ে গেলেও সরকারি স্বীকৃতি বঞ্চিত রয়ে গেছেন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার শহীদ নুরুল মোস্তফা। এ নিয়ে পরিবারে হতাশা ও ক্ষোভের শেষ নেই।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, শহীদ নুরুল মোস্তফার পিতা-মাতা নব্বইয়ের দশকে মিয়ানমারের আরাকান থেকে এ দেশে আসায় তাদের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। এ কারণেই জুলাই অভ্যুত্থানে সন্তান নুরুল মোস্তফা শহীদ হওয়ার পরও তার পিতা সরকারি স্বীকৃতির জন্য আবেদন করতে পারেননি। ফলে শহীদ নুরুল মোস্তফার পরিবার গত আট মাসেও কোনো সরকারি সহায়তা পায়নি। বেসরকারি সহায়তার মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান প্রদত্ত এক লাখ টাকা পেয়েছেন তারা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব এস.এম. সুজা উদ্দিন সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের নামাজ শেষে কক্সবাজার শহর থেকে ঈদগাঁওয়ে শহীদ নুরুল মোস্তফার কবর জিয়ারত করেন। পরে শহীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং তার পিতা শফিউল্লাহ, মা ও ভাই-বোনদের খোঁজখবর নেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘একজন সম্ভাবনাময় তরুণ ফ্যাসিবাদের কবল থেকে জাতিকে মুক্ত করতে নিজের জীবন উৎসর্গ করলেন। অথচ কাগজপত্রের জটিলতার অজুহাতে তিনি এখনো সরকারি স্বীকৃতি পাননি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক।’
তিনি আরও বলেন, ‘শহীদ নুরুল মোস্তফার আত্মত্যাগ আমাদের ভবিষ্যতের বাংলাদেশ ও বিশ্ব গঠনে অনুপ্রেরণা জোগাবে। কাগজপত্রের জটিলতা যা-ই হোক, তাকে শহীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সরকারি স্বীকৃতি দিতেই হবে। শহীদ পরিবারের আহাজারি শুনুন, তখন বুঝবেন বাংলাদেশে কী প্রয়োজন।’
এর আগে, জুলাই নতুন প্ল্যাটফর্মের ফায়াজ শাহেদসহ একটি দলও শহীদ নুরুল মোস্তফার কবর জিয়ারত করেন এবং তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা প্রতিশ্রুতি দেন যে, স্বীকৃতি আদায়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ করবেন।
তারা উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশি কিছু নাগরিক বাংলাদেশের পক্ষে অবদান রাখায় সম্মানসূচক নাগরিকত্ব ও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। শহীদ নুরুল মোস্তফার ক্ষেত্রেও এ ধরনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা যেতে পারে।
শহীদ নুরুল মোস্তফার পিতা শফিউল্লাহ হতদরিদ্র হওয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র জটিলতার কারণে এখনো আবেদন করতে পারেননি বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান।
উল্লেখ্য, জুলাই অভ্যুত্থানকালে ৫ আগস্ট পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের নির্বিচার গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষার্থী নুরুল মোস্তফা। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শহীদ নুরুল মোস্তফা কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম গজালিয়া গ্রামের হতদরিদ্র শফিউল্লাহর সন্তান।